অ্যালেন

শনিবারের ফুটফুটে বিকেল। ৪:৪০ বাজে। ইয়র্ক মিন্সটারের গায়ের একাধিক সর্পিল গলির একটা গলি। প্রায় দক্ষিনেশ্বরের গায়ে যেমন অজস্র গলি আছে, কচুরি-মিষ্টি-শাঁখা-পলা-পেটমোটা শিব-মশা তাড়ানোর ব্যাট-আর-যাহা-কিছু সবই পাওয়া যায়, ওরকমই একটা গলি। এটায় প্রধানত সার দিয়ে খাবারের দোকান। রোমানদের তৈরি শহর বলে এটা বাকি ইংরেজ শহরদের থেকে আলাদা। যাইহোক সেটা আজকের কথা নয়। কথা হল, ওই খাবারের গলিটায় ফিশ অ্যান্ড চিপ্স বাগিয়ে আমি দোকানের উল্টোদিকে মিন্সটারের গায়েই একটা সীটে, রোদে বসে খাচ্ছি।


বৃষস্কন্ধ

ভারতে স্নাতক অথবা স্নাতকোত্তর স্তরে কখনও শিক্ষকতা করি নাই তবে করিতে দেখিয়াছি। স্নাতক স্তর অবধি শিক্ষা আমি গ্রহণও করিয়াছি। শিক্ষকের কেহ ছিলেন রাশভারী, কেহ বা রাশভারী হইবার প্রয়াসী, কেহ বা অমায়িক, মিশুকে। আমি নিজে শিক্ষকতা করিব বলিয়া কোনওদিন ভাবি নাই ফলে তাঁহাদের তরফের আচরণের কার্যকারণ লইয়া ভাবিবার বিশেষ অবকাশ রাখি নাই। সেই সাথে এও বলিয়া রাখা ভালো যে আমার অনুপস্থিতির হারের উপর ভরসা করিয়া বলা চলে, এই কারণে তাঁহাদের বিরাগভজন হইলেও পীড়ার কারণ কখনও হই নাই।


লোকটা

তখনও চশমাটা পড়েনি লোকটা। ভোরের আধো-অন্ধকারে আয়নায় অস্পষ্ট অথচ ভীষণ চেনা একটা মুখ। রোজই আলগোছে নজরে পড়ে যায়, বাথরুমের আয়নায়, জানলার কাঁচে, গাড়ির গায়ে, আয়নায়, আরও কত কী-তে। কিন্তু তখন মন অন্য চিন্তায় ব্যস্ত থাকে। নজর করে না। যখন সত্যিই নজর করতে বসে,  তখন কিন্তু কোনও মিল পায় না নিজের সাথে। এই বুড়োটে, হিংসুটে মুখটা অতি পরিচিত, কিন্তু নিজের বলে বিশ্বাস হয় না। এর সাথে যেন লোকটার ইমেজটা খাপ খায় না। বিট্রে করে মুখটা। লোকটা দেখতে ভালো। সবাই বলে। লোকটা নিজেও জানে। জানে বলেই এই দিনগুলোয় ভীষণ রাগ হয় আয়নার দিকে তাকিয়ে। আজও সেরকম একটা দিন। এই দিনগুলো বলে কয়ে আসে না। হঠাৎ হাজির হয়ে গোটা দিনটা নষ্ট করে দেয়। সবার ওপর রাগ হয় তখন। আজও হবে। কিন্তু আজ একটা বিশেষ দিন। লোকজন এড়ানো যাবে না কোনওমতেই। অবশ্য এমনিতে লোকজন পরিবৃত হয়েই থাকতে ভালোবাসে লোকটা। মধ্যমণি হয়ে থাকার লোভ প্রচন্ড। না, ঠিক লোভ না, কিরকম একটা প্রয়োজনীয়তা। শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য হাওয়ার মতই দরকার হয়। সেটা আদায়ও হয়। কিন্তু এই দিনগুলো এলেই আর মাথার ঠিক থাকে না। না না, মাথার ঠিকভুল না, মাথা ঠিকই থাকে। ইন ফ্যাক্ট এই মাথার জোরেই এতগুলো লোককে আজও ধরে রেখেছে নিজের চারদিকে। নইলে এই ৬৪ বছর বয়সে কজনই বা লোকটার মত পাত্তা পায়? আজ সেই ৬৪ বছর পূর্ণ হবার দিন। আজকের দিনটা এইভাবে শুরু না হলেই ভালো হত।

ইঙ্গ-ভোট

ভোট দিলাম। এদেশে (ব্রিটেনে) প্রথম। আর জীবনে দ্বিতীয়বার। এদেশে এ কবছরে বেশ কটা ভোট হয়ে গেল। এখানে কমনওয়েল্থ দেশগুলো ভোট দিতে পায় আর রেজিস্টার না করলে ফাইন করে বলে রেজিস্টার করেও রেখেছিলাম। কিন্তু এদের রাজনীতির উদ্দেশ্য বিধেয় কিছু নিয়েই খুব একটা মাথা ঘামাইনি। আমি ভারতীয়, এদেশে থাকি, বেসিক হ্যিউম্যান রাইটগুলো পেলেই চলে যায়। কোন পার্টির কিসের কারণে কী পরিবর্তন আনে, মাথা বিশেষ ঘামাতে লাগত না।

Sci-Fi সঙ্কট

একটা জিনিস আমি অনেকদিন ধরেই ভাবি, বাংলায় সাইন্স ফিকশন লেখা এবং পড়া, দুটোই এত কম কেন? এদিকে তো সাইন্স পড়ার জন্যে লোকে দরে স্কুল পাল্টে ফেলছে (নিজের স্কুলে চান্স না পেলে, বা আরও ভালো স্কুলে চান্স পাবার জন্যে)। তাহলে বাংলায় সাই-ফাই লিখছে নাই বা কেন, আর যে কটা তবু আছে সেগুলোও বা কেন বিশেষ সেলিব্রেটেড নয় ভাবতে অবাক লাগে। আর তখনই মনে হয়, সত্যি সাইন্স ভালবেসে কজনই বা সাইন্স পড়ে? কজনই বা সাইন্স পড়ে সত্যি নিজের জীবনে তাকে দেখতে পায় বা ব্যবহার করে? বরং এড়িয়ে চলে। অঙ্ক কত বাজে জিনিস বলতে পেলে আর কিছুই চায় না। বোধহয় অঙ্ক ভালবাসি না বলার লজ্জার চেয়ে অঙ্ক আসলে কত ভালোবাসার অযোগ্য, এটা বললে নিজেকে আরেকটু বেশি ভালবাসা যায়। ফলে সেই জাত যে সাইন্স ফিকশন কম পড়বে সেটাই তো স্বাভাবিক।

Mission: বাংলা

ক'দিন ধরে এতরকম ভ়ার্সান শুনে চলেছি, ভাবলাম নিজের রিসার্চ নিজেই করা উচিত। দেখলাম ব্যাপারটা এইরকম:

প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত বাধ্যতামূলক তিনটি ভাষার মধ্যে একটি বাংলা হতেই হবে

এই বক্তব্যে নানা লোকের নানা ভয়। কারুর ভয় "বাধ্যতামূলক" নিয়ে। কারুর ভয় "বাংলা হতেই হবে"। কেউ আবার ওই কারণেই সাবাশি দিচ্ছে। কেউ বলছে বাধ্যতা কি আর সাধে? ইঁটের উত্তর তো পাটকেলই হতে হয়। একটা বিষয়ে সবাই একমত। 'বাঙালি'কে বাংলা গিলিয়ে না খাওয়ালে কোনও আশা নেই (নো পান ইন্টেন্ডেড)।

উচ্চ-man

এমনি ফেসবুকে বিশেষ আসা হয় না আজকাল। এলেও চতুর্দিকে যা দেখি, পারতপক্ষে চুপচাপ থাকি। কথা বাড়ালেই বাড়ে, আর বেশি বেড়ে গেলেই ক্লান্ত লাগে। ফেসবুকটা এখন ফোনবুকে এসে ঠেকেছে।
কদিন আগেই ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচ ছিল দেখছিলাম, আর লোটা-মাচা করে খিস্তাখিস্তিতে নিউজ়ফিড বোঝাই হয়ে যাচ্ছিল। এই বাঙাল-ঘটির তরজার কিছু একটা ফুর্তির জায়গা আছে নিশ্চয়ই, নইলে লোকের এত পুলক কিসের, বোর হয় না কেউই। কিন্তু ইন্ডিয়া-পাকিস্তান ম্যাচের মতই ও রসে আমি বঞ্চিত। ফ্যানাটিক হওয়া আমার ধাতে নেই। লোটা-কম্বল-মাচা-মশারি নিয়ে যে কত ক্রিয়েটিভ খিস্তি-মিম-নির্মাণ সম্ভব আর অত বোঝা বয়ে যে কত নিচে নামা সম্ভব, না দেখলে পেত্যয় যায় না। সে যাক, যে যা করে ভাল আছে থাক গিয়ে, ভাবি আমি। দেখি শুধু। কালও দেখছিলুম। এর মধ্যেই দেখি একগাদা পরমব্রত-বয়কট মার্কা স্টেটাস। সঙ্গে ওই লালহলুদসবুজমেরুনমার্কা হ্যাশট্যাগ।
যদি ভাল্লাগে...email-এ sign up করতে পারেন/পারো/পারিস, নতুন লেখা ছাড়া কিচ্ছু পাঠাবো না, promise...