উচ্চ-man

এমনি ফেসবুকে বিশেষ আসা হয় না আজকাল। এলেও চতুর্দিকে যা দেখি, পারতপক্ষে চুপচাপ থাকি। কথা বাড়ালেই বাড়ে, আর বেশি বেড়ে গেলেই ক্লান্ত লাগে। ফেসবুকটা এখন ফোনবুকে এসে ঠেকেছে।
কদিন আগেই ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচ ছিল দেখছিলাম, আর লোটা-মাচা করে খিস্তাখিস্তিতে নিউজ়ফিড বোঝাই হয়ে যাচ্ছিল। এই বাঙাল-ঘটির তরজার কিছু একটা ফুর্তির জায়গা আছে নিশ্চয়ই, নইলে লোকের এত পুলক কিসের, বোর হয় না কেউই। কিন্তু ইন্ডিয়া-পাকিস্তান ম্যাচের মতই ও রসে আমি বঞ্চিত। ফ্যানাটিক হওয়া আমার ধাতে নেই। লোটা-কম্বল-মাচা-মশারি নিয়ে যে কত ক্রিয়েটিভ খিস্তি-মিম-নির্মাণ সম্ভব আর অত বোঝা বয়ে যে কত নিচে নামা সম্ভব, না দেখলে পেত্যয় যায় না। সে যাক, যে যা করে ভাল আছে থাক গিয়ে, ভাবি আমি। দেখি শুধু। কালও দেখছিলুম। এর মধ্যেই দেখি একগাদা পরমব্রত-বয়কট মার্কা স্টেটাস। সঙ্গে ওই লালহলুদসবুজমেরুনমার্কা হ্যাশট্যাগ।
অনেক মৌন খোঁজাখুঁজির পর যা বুঝলাম পরমব্রতর (নাকি) মোহনবাগানি জার্সিকে মধ্যমা দর্শানো মধ্যবিত্ত মোহনবাগানিকে পরম আবেগতাড়িত করে ফেলেছে। আগেই বললুম, ঠিক কেন এরকম আবেগ গজাতে পারে জানি না, কিন্তু অরিজিনাল পোস্টটা আর নেই, আছে মস্ত কৈফিয়ত, যে ওটা জার্সিকে নয়, বন্ধুকে দেখানো মধ্যমা। হতেই পারে, কিন্তু নাও তো হতেই পারে। এতে এত দোষের কিই বা আছে। মোহনবাগান তো আরএসএস নয় যে সিডিশনের চার্জে দ্বীপান্তরিত হতে হবে। পরমের সিনেমা-হিটের দায় আছে, আমার তো নেই, কৈফিয়তের দরকারটা বুঝছিলুম না। কয়েকটা কমেন্টের কন্টেন্ট পড়ে দেখলুম।
মোহনবাগানের ১৯১১-এর ইতিহাস (এখনও) স্বাধীনতা সংগ্রামের কনটেক্স্টে পড়তে হয় না, সেটা (নাকি) ভারতবাসীর 'পরম' দুর্ভাগ্য। সবুজমেরুনকে ঠিক ঠিক আলোয় দেখলে (নাকি) তিরঙ্গা দেখাবে। সত্যি এভাবে ভাবার কথা ভেবে দেখিনি। স্বভাবদোষেই। আমার তো দেশাত্মবোধটাই ভেজাল, কিন্তু সেইসব আাপাত-দেশপ্রেমী-ফুটবলপ্রেমী লোকগুলো? যারা জার্সি-পতাকা-নৌকো-মশাল-চিংড়ি-ইলিশ-ঘটি-বাটি-কম্বল-মশারি-লোটা-গাড়ু যা পারে তুলে খিস্তি করে মা-মাসি উদ্ধার করছে?
কৌতুহল সামলাতে না পেরে চেনা এক পিস মোহনবাগানিকে ধরলুম। বাঙাল-মোহনবাগানি, তাই সেফার গ্রাউন্ড, ঠাহর হল। তা সেফ, কথাবার্তা ভদ্রভাবেই মিটল। ধন্যবাদই দেওয়া উচিত। দেশাত্মবোধের কথায় গেলামই না। পরম-আনপরম প্রশ্নটাই বেশি ভাবাচ্ছিল। কিন্তু লজিক শুনে থমকে গেলুম। পরমম্যান যা করবে সেটা, আর সাধারণ মানুষ যা করবে সেটা সমতুল্য নয়। পরম ইজ় আ সেলিব্রিটি। তাই তার ছাড় কম। এমনিতে সেলিব্রিটিদের সামাজিক ছাড় বেশি বলেই কি ক্ষারটাও বেশি? সলমন খান গাড়ি চাপা দিলে আর আমি গাড়ি চাপা দিলে আলাদা ট্রিটমেন্ট বলেই কি? হয়তো। মোদ্দা কথা, সেলিব্রিটি হয়ে গেলে হেট-ক্রাইমের দায় বেশি। এতে সাধারণ মানুষকে আলাদা করে নিচু করা হচ্ছে ভাবার দরকার নেই। তবে সেলিব্রিটিকে উঁচু করা হচ্ছে বটে। সেলিব্রিটিদের দেখে কচিকাঁচারা বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের বদলে মধ্যমা দেখাতে শিখবে (একে পাশ্চাত্য, তায় বুড়ো-আঙুল-তুতো মানের অ্যাম্বিগ্যুইটি নেই), তাও আবার পতাকা, থুড়ি জার্সিকে। এমন অসম্মানের কালচার চারিয়ে যাবে না, ললিত বঙ্গভূমে? কি বলছ?বাঙাল-ঘটির খিস্তিবাজ বাপের সাথে ২৪/৭ বাস করে এর চেয়ে বেশি শিখবে? তবে তো বলব, সাবাশ! এই না হলে বাপ কা বেটা!
যদি ভাল্লাগে...email-এ sign up করতে পারেন/পারো/পারিস, নতুন লেখা ছাড়া কিচ্ছু পাঠাবো না, promise...