শ বাবু #২

ভাই বেরিয়ে গেল। আমার সন্দেহ হল এই ট্রমা কাটিয়ে উঠে ওর পক্ষে আর কোনওদিন হিন্দী গান গাওয়া সম্ভব হবে না। আরেকদিকে মনের ভেতর সুনামিক প্রশ্ন যে হিন্দী গান গাইলে কী হয়। কিনতু এ যা জিনিস! একে জিজ্ঞেস করলে নির্ঘাত ব্রহ্মতেজে ঝলসে দেবে। আমি চুপচাপ ‘নোট’ নিতে লাগলাম আর আড়চোখে দেখতে লাগলাম। লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ইচ্ছে হল।
যখন প্রথমবার শুনেছিলাম এবার দিদিমণির পরিবর্তে স্যার, দেদার পুলক হয়েছিল। কে না জানে টিউশন স্যারেরা ভবিষ্যৎ প্রেমিক হয়। বাবার সাথে যেদিন কথা বলে গেল, উঁকি ঝুঁকি মেরেও বেশি কিছু দেখতে পেলুম না। কৌতুহলের মত জিনিস নিবৃত্ত না হলে যা হয়। উত্তেজনা আর কল্পনা পাল্লা দিতে লাগল। প্রথমে ভাইকে পড়াবে শুনে খুব খুশি হলুম। অবজ়ার্ভেশনের পক্ষে খুবই অনুকূল সংবাদ। লোকটা এল একটা তালপাতার সেপাই। ফটফটে ফরসা। একটু সন্দেহ হল রোগা হতে হতে সী-থ্রু হয়ে গেছে কিনা। তা হোক, মনকে বোঝালাম। দেখতে নিয়ে ভাবে শ্যালোরা। কিন্তু গোটা সেশনটায় পাশের ঘর থেকে যা চাপা গর্জন আসতে লাগল পুরো বাড়া-ভাতে ছাই।
নোট নিতে নিতে এসব সাতপাঁচ ভেবে যখন নিজের কপালের জন্যে কান্না জমে এসেছে আর পরম আদরে দুঃখটা পোহাচ্ছি, হঠাৎ লোকটা বলে উঠল “নিউটনের ফার্স্ট ল বল।” আমি এটা জানতাম। কিন্তু ওই মুহূর্তে কথা জড়িয়ে গেল। শোকে লোকে কথা হারিয়ে ফেলে না? জোড়াতাপ্পি দিয়ে কোনওমতে মোদ্দা কথাটা বললুম। লোকটা আবার ঠাকুমার্ঝুলিয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। চোরের মন তো সেই বোঁচকার দিকেই। আমার খুব চিন্তা হল। ও কী বুঝে ফেলেছে কী ভাবছিলাম? কী লজ্জা! এ যা লোক, মাকে বলবেই। মা হিন্দী গান গাইলেও এসব দুঃখের কোনও দাম দেবে না, আমি জানি।
লোকটা বিরক্তিতে চোখ বন্ধ করল। “নিউটন এটা বলেছেন?” প্রথমে ফাঁড়া কেটেছে ভেবে খুব ফুর্তি হল। যাক। ওটা বোঝেনি। পরক্ষণেই আবার একটু চিন্তা হল। বলেনি বুঝি? আমি তো সত্যি নিউটনের মুখে শুনিনি, এটা তো ফ্যাক্ট। সত্যি বলতে কী বইটাও নিজে খুলে দেখিনি যে এর প্রতিবাদ করি। কিন্তু যদ্দূর মনে পড়ে বাবা এটাই বলেছিল যে জোর না করা হলে যে যা করছিল তাই করে যাবে। এমনকি গড়ান্ত বলের থামার জন্যেও মেঝেটাই দায়ী, বলটা নয়। বাবার ওপর রাগ হল। দেখে বলতে পারত। বাবার মনগড়া গল্প তখন এত বিশ্বাসযোগ্য লেগেছিল, এখন এই লোকটার সামনে বেইজ্জত করে দিল। আবার বলল “নিউটন এটা বলেছিলেন?”
খুব বিরক্ত লাগল। না বলে থাকলে কী বলেছিল তুইই বল। “আমি তো তাই শুনেছি।”
“তুমি শুনেছ?! নিউটন তোমার চায়ের দোকানের ইয়ার?!”
“না।” আমারও এবার আর ধৈর্য থাকছে না। “ভুল বলেছি?”
“নিউটন তোমার ইয়ার-দোস্ত নয়! ল বলতে হলে সেই ভাষাতেই বলতে হয় যা লেখক প্রথম লিখেছিল!”
যদি ভাল্লাগে...email-এ sign up করতে পারেন/পারো/পারিস, নতুন লেখা ছাড়া কিচ্ছু পাঠাবো না, promise...