একটা জিনিস আমি
অনেকদিন ধরেই ভাবি, বাংলায় সাইন্স ফিকশন
লেখা এবং পড়া, দুটোই এত কম কেন? এদিকে তো সাইন্স পড়ার জন্যে লোকে দরে স্কুল পাল্টে
ফেলছে (নিজের স্কুলে চান্স না পেলে, বা আরও ভালো স্কুলে চান্স পাবার জন্যে)। তাহলে বাংলায়
সাই-ফাই লিখছে নাই বা কেন, আর যে কটা তবু আছে
সেগুলোও বা কেন বিশেষ সেলিব্রেটেড নয় ভাবতে অবাক লাগে। আর তখনই মনে হয়, সত্যি সাইন্স ভালবেসে কজনই বা সাইন্স পড়ে? কজনই বা সাইন্স পড়ে সত্যি নিজের জীবনে তাকে দেখতে পায়
বা ব্যবহার করে? বরং এড়িয়ে চলে। অঙ্ক
কত বাজে জিনিস বলতে পেলে আর কিছুই চায় না। বোধহয় অঙ্ক ভালবাসি না বলার লজ্জার চেয়ে
অঙ্ক আসলে কত ভালোবাসার অযোগ্য, এটা বললে নিজেকে
আরেকটু বেশি ভালবাসা যায়। ফলে সেই জাত যে সাইন্স ফিকশন কম পড়বে সেটাই তো
স্বাভাবিক।
কিন্তু তবে যে এত
হলিউডি সাই-ফাই সারাদিন চর্চা করছে? তখন ট্রেন্ডি থাকার ব্যাপার। একাধারে ইংরিজি বুঝি, সাইন্স বুঝি আর সিনেমা বুঝি: তিন-তিনখানা মোক্ষম
চলিয়াতির একখানাই আধার ওটা, সেটা বোধহয় উপেক্ষা
করা সোজা ব্যাপার না। আর ইংরিজি সাই-ফাই-এর সেগুলোই অন্য দেশে নাম করে, যেগুলো আগেই নিজেদের দেশে নাম করে ফেলেছে, ফলে এমনি-ই সেই সিনেমা সার্টিফায়েড-ভালো, ওকে ভালো বলতে আর আলাদা করে বুদ্ধি খরচ করতে লাগে না।
ওই সুত্র ধরেই, আরেকটু ওপর দিয়ে
যেতে চাইলে ইংরিজি সাই-ফাইটাও পড়ে রাখাটা এজেন্ডার মধ্যে পড়ে যায়। এগুলো স্টেটাস
সিম্বল, এসব থাকলে পিকনিকে, মজলিসে বেশি ফুটেজ পাওয়া যায়, সেই সুত্রে “ভালো” প্রেমিক/প্রেমিকাও পাওয়া যায়। আর যেহেতু এগুলো সবারই
পেতে ইচ্ছে করে, এখন তো এটা মিনিমাম
স্ট্যান্ডার্ড হয়ে গেছে। অন্তত সিনেমাটুকু তো বটেই।
আর এর সাথেই লেজুড়
হিসেবে চলে আসে “বাংলায় একটাও ভালো
সাই-ফাই হয় না।” যেন হলেই ভারি
ফুর্তি করে দেখতে যাবে সবাই। এক তো বাজেট নেই। যেটা কিনা সাধারণতঃ সাই-ফাই ফিল্মের
একটা আবশ্যিক শর্ত। কিন্তু বাজেট কেন নেই, সেটাও তো ভেবে দেখতে হবে? আমরা আগেই জানি, সিনেমাটার ভিউয়ারশিপ আর্বান বাঙালি ছাড়া কেউ হয়তো
দেখবে না; কিন্তু সে তো
ঋতুপর্ণ ঘোষের ক্ষেত্রেও সত্যি। সেই ফিল্ম তো তা সত্ত্বেও চলেছে, নেহাত্ মুখ থুবড়ে পড়েনি, কিন্তু সাই-ফাই হলেই কী যেন হয়ে যায়। যারা
ইন্টারস্টেলার দেখল, সেই বাঙালিরও সবাই
বাংলা সাই-ফাই ফিল্ম দেখতে বদার করবে না। বাংলায় ভালো সিনেমা কেন জানি না, সবসময়ই রিলেশনের কমপ্লিকেশন ঘিরেই হতে হয়। তবেই হিট
করে। হয়তো রিয়েল লাইফেও বাঙালি এর বাইরে বেরোতে পারে না বলেই। যে প্রাণীটা ইমেজ
রক্ষার্থে ইংরিজি সাই-ফাই দেখল, তার তো আর বাংলা
সাই-ফাই দেখার তাগিদ কাজ করবে না। সে বাংলা সিনেমায় তাই-ই খুঁজবে যা সে নিজের সাথে
রিলেট করতে পারবে। পড়বার বেলায়ও তাই এই সাইকলজিটাই কাজ করে। খামকা বাংলা সাই-ফাই
পড়তে যাব কেন? বাধ্য হয়েই যদি পড়ি, তো ইংরিজিটাই পড়ব। অপছন্দের কাজ করতে হলে সেটাই করব
যেটায় লাভ বেশি। এবারে ভাবছি কেউ যদি এই সোশাল প্রেশারটার ওপরে একটা সিনেমা করে, তো বেশ হয়!