শ বাবু #৬

ওই কথা শোনার পর মা যথেচ্ছ শাসন করল, বাবা প্রথমে নাক গলাল না (সম্ভবতঃ ওই শাসনটা ডিজার্ভ করি ভেবেছিল)। তারপর বাবা জানতে বসল ঠিক কী হয়েছিল। বললাম। ইতিমধ্যে বাবার সাথে লোকটার কথা হয়ে গেছে এবং আবার আসবে। আমি যেন পারতপক্ষে ভব্যতা বজায় রাখি সে বিষয়ে কিছু বলল-টলল, আমি বিশেষ কান দিইনি। কিন্তু কথা হল, সময় ভাগ করা হবে সব সাবজেক্ট-এর জন্যে, এবং মুখস্থ করা নিয়ে বেশি চাপ নিতে হবে না। কিন্তু লোকটা এখনও দূর হল না।
পরেরবার যখন এল, ততক্ষণে আমি আমার চোয়াল শক্ত করে রেডি, কথা না বলে যথাসম্ভব প্রকাশ করার চেষ্টা করছি যে আমি একটুও অনুতপ্ত নই। অ্যাডিশনাল করা হবে স্থির হল। খানিকটা হিজিবিজি করেই আবার কম্পাল্সারি ম্যাথ, না হলে ফিজিকাল সাইন্স। বেশ, এটা রিপোর্ট করতে হবে। আরও দিন খানেক এরকম গেল। প্যাটার্ন পেয়ে গেলাম। অ্যাডিশনাল করতে হলেই খুব আপত্তি থাকে লোকটার। এই সুযোগ তো ছাড়া যাবে না। অতি অবশ্যই ঘন ঘন আমার অ্যাডিশনাল পরীক্ষা থাকতে লাগল। ১০০-র বেশি-ই হবে। অ্যাডিশনাল করতে হলেই লোকটা এক্সট্রা ঝিমিয়ে থাকে। খুবই ভাল ব্যাপার। ব্যাপারটা এমন পর্যায়ে নিয়ে গেলাম যে আবার একদিন হঠাত্‍ এল না।
এবার বাড়ি সোজা আমাকেই জিজ্ঞেস করল কী করেছি (বা করে রাখিনি)। আমি ভালমানুষটি সেজে বললাম এরকম তো কিছু হয়ই নি। “সত্যি তো? আমি তাহলে ফোন করি?”
এত আনন্দ হল! “আমায় তো বিশ্বাস করবে না, কর।”
লোকটার ঝিমনোর কারণ (অজুহাত) জানা গেল। সে নাকি সিভিয়ার গ্যাসট্রিকের রুগী। সে কলেজ আর টিউশন করিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ওর মা নাকি পড়াতে বারণ করেছে। অন্যের কষ্টে এত খুশি আগে আমি কখনও হইনি। কিন্তু আমার মা তো গলে গেল। বলল একদম চিন্তা করতে না, দরকার হলে ওর মার সাথে কথা বলে বুঝিয়ে দেবে যে যত্নে কোনও ত্রুটিই হবে না। তাতে লোকটা ভয়ানক গলে, কৃতার্থ হয়ে বলল তার নাকি দরকার হবে না, ও আসবে।
এবার আর অমলেট টোস্ট নয়, একেবারে ফলমূল দিয়ে কাস্টার্ড শুরু হল। আদিখ্যেতা দেখে গা জ্বলে গেল। গবগবিয়ে খেটেও লাগল দিব্যি আর মন দিয়ে ঝিমোতেও থাকল। আমার রোখ চেপে গেল। অ্যাডিশনালে তখন একটু একটু স্ট্যাটিস্টিক্স শুরু হয়েছে কিন্তু এ কিছুতেই ধার মাড়ায় না। প্রতিদিন শুধু ওই এক ফ্যাক্টরইজেশন চলছে।
একদিন বললাম স্ট্যাটিস্টিক্স পরীক্ষা। যা খুশি হয়ে বললাম, পরীক্ষা নিয়ে অত একসাইটেড বোধহয় কেউ জীবনে হয়নি। বাধ্য হয়েই করাতে বসল। ক্লাস লিমিট দেওয়া থাকলে ক্লাস বাউন্ডারি বের করে নিতে হয়, আর আমি সেটা জানিও। কিন্তু কী আশ্চর্য! এ জানে না! মিডপয়েন্টটাকে যে ভ্যারিয়েবল বানাতে হয়, সেটাও আমাকেই বলতে হচ্ছে। আমায় আর পায় কে! কেন এত আপত্তি অ্যাডিশনালে এবার বুঝলাম। ভাবলাম এবার একে তাড়ানো যাবেই। তারপর মনে হল, ঘুরিয়ে ঠিক আমার ঘাড় দিয়েই চালাবে, ভাল মত প্রুফ জমানো দরকার। তক্কে তক্কে থাকতে হবে। সেদিনকার মত একটাও ঝামেলা না করে কেটে পড়ল। কিন্তু আর এল না। নিজেই ফোন করে জানাল শরীর আর সঙ্গ দিচ্ছে না।
যা খুশি হলাম, বলার নয়! কিন্তু কদিনই বা! বাবা আরেকটা শ-বাবু যোগাড় করল। তালব্য শ দিয়েই।
পুঃ – শেষ একে বাবা আর ভাই, ভাইকে ওদের স্কুলেরই একটা টীচারের টিউটরিয়ালে নিয়ে গিয়ে দেখেছিল গোল ভুঁড়ি নিয়ে ক্লাস নিচ্ছে। সেটা ২০০৮/০৯ হবে।
পুঃ পুঃ – লোকটা নিজেকে এস এন দের ছেলে বলেছিল। মাধ্যমিকে পড়তাম বলে তাত্‍পর্যটা বুঝিনি। এত আফসোস হয়! জানলে এত সহজে "ছাড়তাম" না!
যদি ভাল্লাগে...email-এ sign up করতে পারেন/পারো/পারিস, নতুন লেখা ছাড়া কিচ্ছু পাঠাবো না, promise...