ইঙ্গ-ভোট

ভোট দিলাম। এদেশে (ব্রিটেনে) প্রথম। আর জীবনে দ্বিতীয়বার। এদেশে এ কবছরে বেশ কটা ভোট হয়ে গেল। এখানে কমনওয়েল্থ দেশগুলো ভোট দিতে পায় আর রেজিস্টার না করলে ফাইন করে বলে রেজিস্টার করেও রেখেছিলাম। কিন্তু এদের রাজনীতির উদ্দেশ্য বিধেয় কিছু নিয়েই খুব একটা মাথা ঘামাইনি। আমি ভারতীয়, এদেশে থাকি, বেসিক হ্যিউম্যান রাইটগুলো পেলেই চলে যায়। কোন পার্টির কিসের কারণে কী পরিবর্তন আনে, মাথা বিশেষ ঘামাতে লাগত না।

কিন্তু বয়স তো বসে থাকে না, স্বাস্থ্যও না। আমারটা আবার দরকারের চেয়ে বেশিই খারাপ। কিন্তু স্বাস্থ্যের চেয়েও বেশি খারাপ দশায় যদি কিছু থেকে থাকে তো সেটা আমার পকেটের দশা। যেহেতু সেটাই টের দেয় আগে আর পলিটিক্সের ডায়রেক্টলি এর ওপর কোনও প্রভাব থাকে না, তাই ভোট-টোট দিতাম না। কী দেব? কাকে দেব? ওদের প্রচার-প্যাম্ফ্লেটগুলো লেটারবক্স থেকে ডাস্টবিনেই যেত। যেই ডাক্তার-দৌড় শুরু হল, অমনি টের পেলাম এদের সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা (এন.এইচ.এস) ভেতর থেকে কি ফংফঙে দশায় বসে (ভারতের সাথে তুলনা করছি না অবশ্য, এখানে এখনও সাধারণ মানুষ সরকারি চিকিৎসা দিয়েই চালায়, ভারতে সেই বোঝা চাপালে তাসের বাড়ির মত খলবলিয়ে পড়ে যাবে গোটা সিস্টেম; এখানে অতটা না, তবে সমস্যাটা সিরিয়াস)। কোনওমতে ঠেকা দিয়ে রাখা আছে। নেহাত মরমর না হলে পাত্তা পাওয়াই দুষ্কর।মৃতপ্রায় হলে ঠেকনা দেবে বড়জোর, যাতে আরেকটু জিইয়ে রাখা যায়। এর কারণ সরকারি ফান্ডে কাট। বর্তমান সরকার এর ওপরে আবার আরও চাপাতে চায়। ফলে প্রাইভ়েটে খরচ দিয়ে চালাতে পারলে ভালো, নইলে মরো। কিন্তু সে খরচ দেবার সাধ্যি আমার কেন, মধ্যবিত্তমাত্রেই নাভিশ্বাস ওঠে। এছাড়াও রেলওয়ে, ইমিগ্র্যান্ট, আরও প্রচুর ইস্যু, প্রচুর তার nuances, তাতে ব্রেক্সিট আছে, জঙ্গি-বিরোধিতা আছে, ইত্যাদি, ইত্যাদি। ভারতীয় হয়েও এবারের ভোটটা, অন্তত এন.এইচ.এসের প্রেক্ষিতে, আমার পক্ষে যে গুরুত্বপূর্ণ, টের পেলুম। কিন্তু সেসব তো অন্য (অনেক বড়) গল্প।
আজকের কথায় আসি। প্রথমতঃ, এখানে ভোটে ছুটি দেয় না। লোকের খেয়ে পড়ে কাজ আছে, তারা কাজে যায়ও। সকাল সাতটা থেকে রাত দশটা অবধি ভোট দেওয়া যায়। এসময় ১০টা অবধি দিব্যি দিনের আলো থাকে ফলে কোনও সমস্যা থাকে না। এসব আগেরবারগুলোতেই দেখতাম। এই প্রথমবার পোলিং স্টেশন গেলাম। সেটা লোকাল চার্চের ভেতরে। গাছ-টাছের গায়ে বড় বড় করে POLLING STATION লেখা ল্যামিনেটেড (খুব বৃষ্টি হয় তো) কাগজ সাঁটা থাকে।
যাইহোক, গেলুম। এত ফাঁকা, দেখে অবাক লাগল। গিয়ে দেখি জনা-তিনেক লোকের একটা লাইন (তখন দুপুর দেড়টা-পৌনে দুটো হবে)। ব্যস। একদিকে তিন-চারটে মহিলা বসে, পোলিং কার্ড দেখালেই নম্বরটা মিলিয়ে নিয়ে একজন নামটা কেটে দিচ্ছে একটা লিস্ট থেকে, আর আরেকজন ব্যালট পেপার ধরিয়ে দিচ্ছে। উল্টোদিকে চারটে খুপরি কাটা, সেখানে একটা সাদা সুতো বাঁধা বেঁটে, ভোঁতা, মোটা শিসওয়ালা পেন্সিল। মাঝখানে কালো প্লাস্টিকের দুধের ক্রেটের মত বাক্স। লোকজন পটাপট মুখে হাল্কা হাসি রেখে, যাচ্ছে , ভোট দিচ্ছে, বেরিয়ে আসছে। বাইরে লোকাল কাউন্সিলার দাঁড়িয়ে, হাসিমুখে ধন্যবাদ জানাচ্ছে, ভোট দিয়ে কৃতার্থ করার জন্য। অন্য পার্টির লোকটাও তার পাশেই দাঁড়িয়ে একই কাজ করছে। ব্যস। কোনও হুড়োহুড়ি নেই, ঠায় দাঁড়ানো নেই, বিরক্তি নেই, রেলাবাজি নেই, চোপা নেই, ছুটি নেই, মাংসভাতের প্রমিস নেই, ভোট কেন দিতে সাহস করছি (বা করছি না) সেই প্রশ্ন নেই, ইভিএমের মত ফোকরবাজির যন্ত্র নেই, ব্যালটবাক্সে শেকল বেঁধে লোকদেখানি পোক্তকরণের চেষ্টা নেই। আর সর্বোপরি, নেই মিটিয়ে ফেলার পর আঙুলের ওপর বেগুনি কালির প্রমাণছাপ।
যদি ভাল্লাগে...email-এ sign up করতে পারেন/পারো/পারিস, নতুন লেখা ছাড়া কিচ্ছু পাঠাবো না, promise...