ছুটির দায়

যখন গরমের ছুটি পড়ত,যখন ছুটি-ছুটি হত আর আমার যুক্তিফুল-মাখা ভাত পড়ে থাকত, যখন ছুটি-ছুটি হয়ে গেলেই হাতেরলেখা নিয়ে বসতে হত আর ভাবতাম কেন জড়ানো হাতের লেখা শিখতে হবে যদি সেই নিটনেসের জন্যে ছেড়ে ছেড়েই লিখতে বলবে, আর যখন লিখতে ভাল্লাগছে না বলে মায়ের পাশটাতেই ঘুমের ভান করে শুয়ে পড়তাম, আর জানলা দিয়ে শুধু ফুটফুটে নীল আকাশের গায়ে তিনটে নারকোল গাছের মাথা দেখতাম, আর তারও ওপরে অনেক দূরে কালো কালো দাগের মত ছোট হয়ে যাওয়া চিল উড়ত আর ভাবতাম ওরা ডানা ঝাপটায় না কেন, শুধু গ্লাইড করে কি করে, আর এভাবেই কি জটায়ু উড়ত আর তাই ওর ডানা কেটে দেওয়া অত ইজ়ি ছিল, আর এভাবেই কি গাংচিলও উড়ে মাছ চুরি করতে গিয়ে বগাপুলিশের হাতে ধরা পড়ে যেত আর সেই ভয়ে ভুতু আর হাঁসুখোকা গুটি গুটি সরে পড়ত, এসব ভাবতে ভাবতে বেখেয়াল হয়ে যেতাম, তখনই মায়ের ঘুম ভেঙে যেত আর হাতেরলেখা একটুও এগোয়নি বলে রেগে যেত কারণ প্রত্যেকবারের মতই আমার ছুটির কাজ জমতে থাকত শেষদিনটার জন্যে।
কিন্তু ততক্ষণে আমার খেলতে যাবার হাঁক পড়ে যেত আর মায়ের তিরস্কার ভুলতে লাগত দু'মিনিট। যতক্ষণে খেলে ফিরতাম, আমার জন্য রেডি থাকত খাওয়া যাতে খেয়েই পড়তে বসে যেতে পারি। কিন্তু ততক্ষণে তো দাদু অফিস থেকে আসার টাইম হয়ে গেছে। কানটা খাড়া করে খাতা বই নিয়ে বসে আছি কখন ফটাস্ করে দাদু চটিটা ফেলবে। তক্ষুনি তো "দাদু!" বলে দৌড়তে হবে, দাদু নিচ থেকে প্রশ্রয় দিয়ে সাড়া দেবে "ঔ!" আর তারপর নিশ্চিন্তে পিঙ্কী-চাচা-চৌধুরী-নন্টে-ফন্টে নিয়ে বসে পড়তে হবে দাদুর চেয়ারের পাশে খাটের ওপর...হলিডে হোমওয়ার্ক শেষ করানোর সময় খোঁজার দায় মায়ের। এখন এই যে কাল ঈস্টার হলিডে শুরু হয়ে যাবে, কিন্তু এখনও কাজের দায় চাপিয়ে দেবার কাউকে খুঁজে পাচ্ছি না।
যদি ভাল্লাগে...email-এ sign up করতে পারেন/পারো/পারিস, নতুন লেখা ছাড়া কিচ্ছু পাঠাবো না, promise...