লোকজনের সাধারণতঃ একটা প্রবণতা থাকে প্রমাণ দেওয়ার যে "এতগুলো লোক আমায়
নিয়ে খুশি (অর্থাৎ আমি বেশ ভালই সঙ্গে নিয়ে চলার মত একটা মানুষ)"। নিজেও
অন্যদের একইভাবে নম্বর দেয় ও বিচার করে। সেই ছোটবেলা থেকে এর ট্রেনিং শুরু
হয়। যবে থেকে স্কুল-জাতীয় কিছুতে ঢুকিয়ে দেয়, তবে থেকেই আশা করে
প্যাস্টেল-চিবানো, কানে-পেন্সিল-গোঁজা, নাক-থেকে-সিকনি-গড়ানো সতীর্থদের
মধ্যে থেকে নিজের clique খুঁজে নেবে ছোটরা। আর সে দায়িত্বটা ঠিকমত পালন
হচ্ছে কিনা পরীক্ষা করে "কিইইই, বাবুসোনা? ইস্কুলে কটা বন্ধু হল?" বিশেষ
করে বাচ্চা-in-question যদি introvert, লাজুক হয়, তবে তো এই পরীক্ষা প্রতি
হপ্তার exercise! গেঁড়েটা হয়তো ভাবতেই পারেনা যে তার একাধিক বন্ধু সংগ্রহ করার
কথা। তারমধ্যেই পরবর্তী প্রশ্ন থাকে তাদের বন্ধুদের কি নাম। বলতে না পারলেই "এ
বাবা! বন্ধুকে নাম জিজ্ঞেস কর নি? বন্ধুর নাম জানতে হয় তো!" সবে হয়তো
ইরেজ়ার আদান-প্রদান দিয়ে একটা আধো-পরিচিতি তৈরি হচ্ছিল, খুদেটা সবে নিজের
স্বভাবের সাথে নতুন-প্রাণীটা ঠিক কিভাবে কম্প্লিমেন্ট করবে, বা আদৌ করবে
কিনা বুঝে ওঠার চেষ্টা করছিল, 'হিতৈষী' গুরুজনের গুঁতোয় বেহিসেবী লেবেল
মেরে দিতে শুরু করে দিতে হল তাকে। ব্যাপারটা অফিশিয়াল আর কারখানা-সম করে
তোলার জন্যে রইল অমোঘ 'ভাব' (বুড়ো-আঙুল সহযোগে)। পরে যদি সুবিধে না হয়, তার
জন্যে তো উপায় আছেই: আড়ি।
এই ট্রেনিংটাই আমরা এরপর থেকে রোজ চালিয়ে
যাই। আমাদের স্বভাবে বসে যায় মানুষকে জানতে না চাওয়ার অভ্যেসটা। শুধু বুঝে
নিই যে অনেক বন্ধু সংগ্রহ করে ফেলে সবাইকে প্রমাণ দিয়ে দিতে হবে যে আমি
আড়ির অযোগ্য। এটার একটা বাজে দিক হল, বন্ধুত্বটা কি কারণে হল সেটা ভাবি না।
আড়ি কিসে না হয় সেদিকে মন দিই। ছোটবেলায় ব্যবস্থাটা যে খুব খারাপ যায় তা
নয়, কারণ তখন খুব একটা আলাদা উদ্দেশ্য সবার থাকে না। সবাই মোটামুটি সারাদিন
খেলা/গল্প আর পড়াশোনা করতে না চাওয়ার কাজে ব্যস্ত থাকে। বড় হতে হতে যখন
নিজের ধরণটা সম্পর্কে ধারণাটা বাড়তে থাকে, তখন দেখা যায় পুরনো বন্ধুত্বগুলো
নস্টালজিয়ার জন্যে জমে গেলেও অধিকাংশ নতুন বন্ধুত্বগুলো টেকাতে অনেক বেশি
চেষ্টা দিতে হয়, তাতেও হয়তো কাজ হয় না। যদি বা হয়, হয়তো দেখা যায় সেটা
একতরফা রয়ে যায় কিন্তু ট্রেনিং বলে, ক্ষান্ত দেওয়াটা নিজের লজ্জা, নইলে
দুপক্ষই ভাবে এটা বোঝা হয়ে গেছে, কিন্তু কোনও পক্ষই 'দোষী' হতে চায় না। তা
ছাড়া, এই করে করে বন্ধু তো কমতেই থাকবে - এই ভয়টাও কম না। মুশকিলটা হল বড়
বয়সে এসেও যে হাতে-গোনা খুঁতবিহীন বন্ধুত্বগুলো হয়, সেগুলোকে দেখেও কেউ
বুঝতে চায় না আসল রহস্যটা কি। সেগুলো যে কোনও ধরণের চেষ্টা ছাড়াই দিব্যি
টিকে যাচ্ছে, কেউ খেয়াল করে না। সবচেয়ে অসহ্যকর হয় এই ট্রেনিংটা দিয়ে কেউ
যখন প্রেম করতে যায়। ২৪ ঘন্টা অশান্তি তো আছেই (ছেলেরা PKP 1,2 বানায়/দেখে;
মেয়েরা তার reaction দেয়/শেয়ার করে), যতক্ষণ সন্ধি থাকে, মনমরা হয়ে
অ্যাডজাস্ট করে কাটিয়ে দেয়। এতকিছু সত্ত্বেও লোকে সময়, এনার্জি এক করে দেয়
এগুলো টিকিয়ে চলে 'সামাজিক' হতে।