শ বাবু #৩

এই বয়সে এসে অনেকগুলো টিউশন করিয়ে ফেলে নিজেকে আবার লোকটার জায়গায় কল্পনা করলাম। প্রতিবারের মত এবারও কুঁকড়ে গেলাম। আমার কারণে আমারই স্টুডেন্ট আমারই সামনে বসে কেঁদে দিলে আমি সম্ভবতঃ তক্ষুনি পালাব। আর কোনওদিন যে সে বাড়িতে পা রাখব না বলাই বাহুল্য। কিন্তু সবাই তো আমি নয়, এ তো নয়ই। দিব্যি বসে আমার কান্নার ওপর দিয়েই নোট দিয়ে যেতে লাগল, আর অবাক কান্ড, আমিও মিস করার ভয়ে লিখতেও লাগলাম! অতি অবশ্যই লেখানো হল নিউটনের ফার্স্ট ল।

“Everyobjectcontinuestobeinastateofrestorofuniformmotioninastraightlineunlesscompelledbysomeexternalforcetoactotherwise”! 


লোকটা নিজেও এভাবেই বলত আর আমাকেও বলেছিল এটাই করতে। তারপর চলে গেল। পরের দিন পড়া ধরবে।
লোকটা যে বিচ্ছিরি এ বিষয়ে আমি নিঃসংশয়। এখন প্রশ্ন একে আর কতদিন সহ্য করতে হবে। আবার শনিবার এল, আমার পড়ার দিন। বই-খাতা এনে বসতেই মনে হত বন্দী হয়ে গেলাম। প্রথমেই বলল “নিউটনের ফার্স্ট ল বল।” কোনও মনে হয়? বললাম।
“হয়নি।“
আমি তো অবাক। হয়নি মানে? আবার বললাম।
“হয়নি। শোনো, তুমি যদি ভেবে থাকো যা খুশি বলে পার পেয়ে যাবে, সেটা হবে না। আমার ধৈর্যের অভাব নেই।"
“আমার মনে হয় আমি ঠিকই বলেছি।”
“তাই? এবার আমি বলি?”
এসব কথায় কী বলতে হয় জানি না, চুপ করে রইলুম। লোকটাও তাকিয়ে আছে। একটু ভয়ই হল। মাকে ডাকবে নাকি? আবার বলল, “বল আমি বলব কিনা?”
“হ্যাঁ।” আমি নতমস্তক।
“Everyobjectcontinuestobeinastateofrestorofuniformmotioninastraightlineunlesscompelledbysomeexternalforcetoactotherwise, তুমি কী ভুল বলেছ বুঝতে পেরেছো?”
আমি চুপ।
“বুঝতে পেরেছো????????”
“না।”
“না?! এরপরেও না? ইউনিফর্ম বলেছিলে?”
“না।”
“… ইন আ স্ট্রেট লাইন বলেছিলে?”
“না।”
“এটা নিউটনের ল?”
আমি চুপ।
“এটা নিউটনের ল???”
“না।”
“তোমার মাকে ডাকো।”
মনে হল ভুল শুনলাম। থাকলাম সাহস করে। আবার বলল “মাকে ডাকো!”
প্রাণটা হাতে করে উঠে গেলাম। মা এল। মাইরি বলছি, ইনিয়ে বিনিয়ে বাংলা সিনেমার নায়িকাদের মত সবটা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিল। কী পিটপিটে লোক! বাকিটা তো জানা কথাই। মা বকতে লাগল, ও মজা পেয়ে গেল মাকে দলে পেয়ে আর আমার ঢ্যাঁটামি বাড়তে লাগল।
এরকম একদিন অঙ্ক করছি আর লোকটা চেয়ারে হেলান দিয়ে পড়ে আছে, আর মনে মনে ভাবছি এক্ষুনি মরে যাক। সবে একটা শেষ করে, বইয়ের সাথে উত্তরটা মিলিয়ে পরেরটায় যাব, খাতাটা চাইল। জেগেছিল, বুঝতেই পারিনি। দিলাম। খুব নাটুকে ভাবে চোখ বন্ধ করে বলল, "কী বুঝতে হবে আমায় এর থেকে?"
লোকটার প্রশ্ন বোঝার আর আজকাল চেষ্টা করি না। বললাম, "অঙ্ক।" লোকটা চোখ খুলে সোজা তাকিয়ে রইল। হঠাৎ টেবিলের ওপর হামলে পড়ল। আমি ভাবলাম মারবে, নিজেকে বাঁচিয়ে নিতে যাব, আমার পেছনের জানলাটার দিকে শীর্ণ, রক্তশূন্য একটা ভূতুড়ে আঙুল দেখিয়ে বলল, "ওই বাড়িটা দেখছ?" আশ্চর্য ছিঁচ্কে তো?! এভাবে কাগা-খায়-বগা-খায় করে ভুলিয়ে ভালিয়ে মারবে? আমায় ভাবেটা কী? না ঘুরেই বললাম, "ওটা সেনবাড়ি।"
"ওটা কিরকম ভাঙাচোরা দেখতে পাচ্ছ?" কী বিরক্তিকর! আমিও ঠিক করলাম কিছুতেই সুযোগ দেব না। বললাম, "জানি, ছোট থেকেই দেখছি।"
"তোমার অঙ্ক করাও ওরকম। ওই বাড়িটার যেমন কোনও বাঁধন নেই, তোমার অঙ্কের স্টেটমেন্টেরও কোনও বাঁধন নেই। ওইরকম দাঁত ছিরকুটে দেখতে। এভাবে আর কিছুই না, মাধ্যমিকে ফেল করে চায়ের দোকান দিতে হবে।" বলেই আবার ঝিমিয়ে গেল।
যদি ভাল্লাগে...email-এ sign up করতে পারেন/পারো/পারিস, নতুন লেখা ছাড়া কিচ্ছু পাঠাবো না, promise...